“এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।”
আজ বাংলা বর্ষপঞ্জিকার আষাঢ় মাসের প্রথম দিন। বাংলা সাহিত্যে ও সংস্কৃতিতে আষাঢ় এক বিশেষ আবেগের নাম, যা বর্ষা ঋতুর সূচনা হিসেবে চিহ্নিত। এ দিনটিকে ঘিরে বাংলা কবিতা, গান, চিত্রকলা ও কৃষিভিত্তিক জীবনে রয়েছে ঐতিহ্যপূর্ণ তাৎপর্য।
আষাঢ়ের বর্ষা মানেই বৃষ্টিভেজা প্রকৃতি, হৃদয়ের ভেতর এক চিরন্তন সুরের প্রতিধ্বনি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অনেক কবি বর্ষাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য কালজয়ী রচনা। "আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে", "আষাঢ়ে অন্ধকার ঘনাইল গগনে"—এসব কবিতা আজও আষাঢ়ের দিনে শ্রোতাদের মনের ভিতরে বৃষ্টি ঝরিয়ে দেয়।
তবে প্রবাসজীবনে এই আষাঢ়ের আবেদন একেবারেই ভিন্নরকম। বিদেশের আকাশে বৃষ্টির শব্দ শোনা যায় না, নেই কাদামাটির গন্ধ বা কদমফুলের সুবাস। তবুও, হৃদয়ের গোপন কোনে বাংলার বর্ষা চুপিচুপি এসে বসে। অনেকের কাছে এই দিন চা-কফির পেয়ালায় এক দীর্ঘশ্বাস হয়ে ধরা দেয়—এক গভীর অনুভব, প্রবাসী হৃদয়ের এক নীরব আর্তি। প্রবাসে শরীর থাকলেও মন তো এখনও বাংলায় বাঁধা, সেই গ্রাম, সেই মাঠ, সেই মেঘ, সেই বর্ষায়। এখানে আমরা হয়তো আষাঢ় ছুঁতে পারি না, তবুও সে আমাদের ছুঁয়ে যায়, প্রত্যেক বছর, এই সময়, চোখে, মনে, স্মৃতিতে।
"এমন দিনে তারে বলা যায়…"
এই কবিতার পঙ্ক্তি আজও বাজে প্রবাসী হৃদয়ে। এর ভেতরে যেমন আছে আবেগ, তেমনি আছে প্রকৃতির সঙ্গে অন্তরের সুর মিলিয়ে এক মোহময় স্পর্শ। আষাঢ় মানেই শ্রাবণের আগমনী বার্তা, প্রকৃতির বুকে ধরণীর আলিঙ্গন, আর হৃদয়ের গোপন প্রণয়ের প্রতিধ্বনি।
বর্ষার শুরু মানেই কৃষিজীবনে নতুন চাষাবাদের সময়। যদিও প্রবাসে কৃষির সরাসরি প্রভাব নেই বললেই চলে, তবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা নানা সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে দিনটি স্মরণ করেন। কেউ কেউ ঘরোয়া আয়োজনে আষাঢ়কে স্মরণ করেন গান, কবিতা ও গল্পের মাধ্যমে।
বাংলা বছরের ছয় ঋতুর মধ্যে বর্ষা সবচেয়ে রোমান্টিক ও আবেগঘন ঋতু হিসেবে বিবেচিত। আর তারই প্রথম দিনে, প্রকৃতি ও মন একসাথে বলে ওঠে—“এসো বর্ষা, ফিরে এসো স্মৃতির জানালায়।”
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan